সাবেক সরকারের চিহ্নিত ৯ জন মন্ত্রী-এমপির অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান করছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কিন্তু তদন্তে বেরিয়ে এলো! দেখা গেল, মন্ত্রী-এমপিদের চেয়েও অবৈধ সম্পদে এগিয়ে আছেন তাঁদের এপিএস এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা। মন্ত্রী-এমপিদের নাম ভাঙিয়ে বিগত মহাজোট সরকারের আমলে তাঁরা বাড়ি-গাড়ি, ফ্ল্যাটসহ ১০ থেকে ৫০ কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।
দুদক মুহূর্তে সাতজন এপিএসের দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে এবং আরো কয়েকজনের সম্পদ অনুসন্ধানের প্রস্তুতি আছে দুদকের। গতকাল মঙ্গলবারই সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর এপিএস শামীম আল সাইফুল সোহাগকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। চলতি মাসেই অন্য সন্দেহভাজনদের দুদক কর্মকর্তাদের মুখোমুখি হতে হবে বলে দুদক সূত্র জানায়।
সম্প্রতি মন্ত্রী-এমপিদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের জন্য গঠিত কমিটির তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এপিএসদের সম্পদ বিবরণী জানতে পেরে দুদক কর্মকর্তারা বেশ বিস্মিত। পাঁচ বছর আগেও যাঁদের স্বাভাবিক জীবন যাপন করা ছিল দুঃসাধ্য, এখন তাঁদের বিলাসী জীবন। দামি গাড়ি হাঁকিয়ে চলছেন কেউ, আবার কেউ মূল্যবান ফ্ল্যাটের মালিক। এমনকি বিভিন্ন স্থানে একেকজন বহু পরিমাণ জমি কিনে রেখেছেন বলেও দুদক কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন।
সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমানের দুর্নীতি অনুসন্ধান করতে দুদক কর্মকর্তারা গত ৩ থেকে ৬ ফেব্র“য়ারি তাঁর নির্বাচনী আসন পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) এলাকা সফর করেন। এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে প্রতিমন্ত্রীর পাশাপাশি তাঁর এপিএস সোহাগের অবৈধ সম্পদের ব্যাপক তথ্য পাওয়া যায়। এর পরই সোহাগকে দুদক তলব করে। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে গতকাল দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সোহাগকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদক।
সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর এপিএস অনেক তথ্য লুকানোর চেষ্টা করেছেন। প্রতিমন্ত্রীর ব্যাপারে তিনি বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে এখন কিছুই প্রকাশ করা যাবে না।
এপিএস সোহাগ সাবেক প্রতিমন্ত্রীর ব্যাপারে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেও নিজের সম্পর্কে তেমন তথ্য দেননি। দুদক কর্মকর্তাদের বিভিন্ন প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে গেছেন। শিগগিরই তাঁকে আবারও দুদকের মুখোমুখি করা হবে।
গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর এপিএস দিপু ঘুষ-বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রায় অর্ধশত প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন। একেকটি প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে তাঁর পকেটে পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঢুকেছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিমন্ত্রীর নামে ঘুষ নিয়ে নিজেই ভাগিয়ে নিতেন তিনি। রাজধানীর ধানমণ্ডি ও মোহাম্মদপুরে ফ্ল্যাট এবং উত্তরায় সাড়ে সাত কাঠা জমি আছে তাঁর। এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এপিএস হওয়ার আগেও নিত্য অনটন ছিল দিপুর সংসারে। বিগত সরকারের সময় তিনি এলাকায় নামে-বেনামে বহু পরিমাণ জমি কেনেন। লন্ডনেও তাঁর বাড়ি রয়েছে বলে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে।
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হকের এপিএস মোসায়েদ আলী খোকনের বিরুদ্ধেও অবৈধ সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক। তিনিও খুব অল্প সময়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বাড়ি-গাড়ির মালিন বনে গেছেন। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে এমন তথ্যের সত্যতা মিলছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিগগিরই দুদক কার্যালয়ে তলব করা হবে বলে দুদক সূত্র জানায়।
মন্তব্য করুন