কোটি টাকার নেশায় উন্মক্ত কোটা আন্দোলনকারীরা

কোটা বিরোধী আন্দোলনের নেপথ্যে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াও সবচেয়ে বেশি যে কারণটি ভূমিকা রেখেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে তা হল কয়েক কোটি টাকা প্রাপ্তি। গত তিন মাস থেকে কোটা বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীরা ছাত্রছাত্রী ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে আসলেও গত ৬ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত অন্তত সাড়ে ছয় কোটি টাকা সংগ্রহের প্রমাণ মিলেছে। সম্প্রতি গোয়েন্দা অনুসন্ধানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিপুল অংকের টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও জামায়াতের মালিকানাধীন কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে কত টাকা নেয়া হয়েছে তার অনুসন্ধান চলছে।

জানা গেছে, কোটা সচেতনতা সপ্তাহ পালন, টি-শাট, কোটা সংস্কার চাই লেখা মাথার ব্যান্ড, বঙ্গবন্ধুর ছবি, পোস্টার লিফলেট ও আহতদের চিকিৎসার নামে তিন মাস ধরে টাকা সংগ্রহ করা হচ্ছিল। তবে তার পরিমান পাঁচ লক্ষ টাকার বেশি হবে না। কিন্তু এ মাসের ৬ এপ্রিল থেকে 01784280686, 01725080136, 01743870298, 01773979020, 01911789506, 01673185026 নম্বরগুলোতে বিকাশ ও ডাচ বাংলা ব্যাংকের রকেট সার্ভিসের মাধ্যমে বিপুল অংকের টাকা আসতে থাকে। ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বিকাশ একাউন্টগুলোতে প্রতিদিনই টাকা জমার লিমিট অতিক্রম করার বিবরণ দেখা যায়। এজন্য দুটি নম্বরকে এজেন্ট একাউন্টে রূপান্তরিত করা হয়। এছাড়া নীলক্ষেত এলাকার দুটি বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে সংগৃহিত অর্থ প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা আসে।
এদিকে প্রবাসীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত টাকার পরিমাণ অন্তত ৮৭ লক্ষ টাকা এবং কয়েকজন শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও নেতার কাছ থেকে নগদে সংগ্রহ করা টাকা অন্তত সাড়ে তিন কোটি টাকা।

টি-শার্ট ব্যবসা:
আন্দোলনের জন্য প্রথম পর্যায়ে প্রতিটি ৬০ টাকা দরে সারাদেশে ৭০ হাজার টিশার্ট বিক্রয় করা হয়েছে যার মধ্যে ১০ টাকা কেন্দ্রীয় নেতাদের লভ্যাংশ বলে উল্লেখ করা হয়। বর্তমানে নিষ্ক্রিয় একজন সংগঠক জানান, নারায়নগঞ্জ থেকে কোটা সংস্কারের স্লোগান ছাপানোসহ প্রতিটি টি-শার্টে খরচ হয়েছে ৩২ টাকা। অর্থাৎ টি-শার্ট ব্যবসা করে আহবায়ক কমিটি লাভ করেছে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা।

রাজনৈতিক অনুদান:
রাজনৈতিক অনুদানের উল্লেখযোগ্য অংশ এসেছে বিএনপি-জামাত পন্থি শিক্ষকদের মাধ্যমে। আন্দোলন উপলক্ষে জামাত নিয়ন্ত্রিত কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে সাংবাদিক মৌসুমী মৌ-এর মাধ্যমে খাবার পাঠানো হতো শামসুন্নাহার হলে। সেখান থেকে আন্দোলনকারীদের কাছে খাবার পাঠানো হত। খাবারের টাকা ছাড়াও আহতদের চিকিৎসার নামে বিভিন্ন ধনাঢ্য ব্যক্তির কাছ থেকে মৌ প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা নিয়েছে। রাশেদ খান, নুরুল হক নুরু, ফারুক হোসেন, মশিউর রহমান, আতাউল্লাহ ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আমিনুল ইসলাম তাদের স্থানীয় বিরোধী দলীয় নেতাদের কাছ থেকে আন্দোলনের নামে সংগ্রহ করেছে এক কোটি টাকার বেশি। উম্মে হাবিবা নামে এক সংগঠক আন্দোলন পরিচালনার জন্য ২৬ লাখ টাকা দিয়েছে কিন্তু অর্থের উৎস সংশ্লিষ্টদের জানানো হয় নি।

সারাদেশে আন্দোলন ব্যবসার প্রসার:
বিভিন্ন জেলায় গঠিত কমিটিগুলোর মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করা হলেও সে টাকার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় কমিটি হস্তক্ষেপ করছে না। নির্ধারিত টাকা পরিশোধ করে টি-শার্ট ও লিফলেটসহ যাবতীয় সরঞ্জাম পাঠানো হয়। এর অতিরিক্ত যত টাকাই তোলা হোক তাতে কেন্দ্রীয় কমিটি হস্তক্ষেপ করবে না বলে জানানো হয়েছে।

আন্দোলনের নামে অর্থ লুটপাট নিয়ন্ত্রণ করছে রাশেদ, নুর, মশিউর, মৌ, হাবিবা, ইয়ামিন ও সুমনসহ আরও দুজন।

কোটা বিরোধী আন্দোলন নিয়ে আন্দোলনকারীদের মধ্যে তিনটি ভাগ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু তাদের ঐক্যে আশীর্বাদ হয়েছে নগদ প্রাপ্তি। তথাপি ক্ষোভ বিরাজমান। এপ্রিলের পাঁচ তারিখ থেকে অনেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনেছে। জোবায়ের নামে আন্দোলন সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, ছাত্রছাত্রীদের আবেগকে কেন্দ্র করে গুটিকয়েক ব্যক্তি ব্যবসা করছে। আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী সকলেই বিভাগের শেষ কাতারের ছাত্রছাত্রী যাদের পক্ষে বিসিএস প্রিলিমিনারী পাশ করাও সম্ভব নয়। তাই বিভিন্ন অযুহাতে আন্দোলনকে ব্যবহার করছে টাকা উপার্জনের মেশিন হিসেবে।

কোটা বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীদের প্রায় সকলেই নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আন্দোলনের শুরুতে মিস কল দিয়ে যাদের মাস অতিবাহিত করতে হতো তাদের কাছে আসতে থাকে নতুন ট্যাব, নতুন মোবাইল। পরিচয় পত্রের সাথে ব্যাংকের এটিএম কার্ড যুক্ত হয়েছে। ছাত্রদের আবেগকে কেন্দ্র করে টাকা আয়ের যে পথে নেমেছে তাকে প্রতারণা বললে ভুল হবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তের পাশাপাশি দুদকের মাধ্যমে তাদের আর্থিক বিষয়াবলীর অনুসন্ধান করার দাবি করছেন সচেতন মহল।

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

%d bloggers like this: