বিএনপির কিছু নেতা ও হিজড়াদের সংঘবদ্ধ একটি চক্র আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের বহু নেতাকর্মীকে হিজড়া হতে প্রলুব্ধ করছে বলে চাঞ্চল্যকর তথ্য জানা গেছে। চাঁদা আদায়সহ নানাভাবে টাকা রোজগার করার জন্য হিজড়াদের একটি চক্র সক্রয় রয়েছে। ওই চক্রের খপ্পরে পড়ে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের অনেকেই গোপনাঙ্গে অস্ত্রোপচার করে হিজড়ায় পরিণত হয়েছেন। বিষয়টি অবাক হওয়ার মতো হলেও অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এ সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য। অতীতে এ ধরনের অপারেশন পাশের দেশ ভারতে করানো হলেও বর্তমানে খোদ ঢাকাতেই তা হচ্ছে। অপারেশন করিয়ে সারা দেশে বা ঢাকায় এ পর্যন্ত কতজনকে হিজড়ায় পরিণত করা হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান জানা নেই কারও। তবে রাজধানী ও পার্শ্ববর্তি এলাকায় এ সংখ্যা শতাধিক হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান।
জানা গেছে, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নিযুক্ত করার পর হাবিবুন্নবী সোহেলকে তারেক জিয়া সরকার পতনের আন্দোলনে হিজড়াদের যুক্ত করার নির্দেশ দেন। তারেক রহমানের ভাষ্য ছিল, বিএনপি নেতাকর্মীরা যেহেতু আন্দোলন গড়ে তুলতে অপারগ হয়েছে এবং তাদের আন্দোলন সম্পূর্ণই জামায়াতে ইসলামীর উপর নির্ভরশীল, তাই হিজড়াদের সম্পৃক্ত করাই শ্রেয়।
তারেকের নির্দেশের পর আবুল হিজড়া, কাজলী হিজড়া, রত্না, রাশিদার ও মনু হিজড়ার সাথে সোহেল ও তারেকের সাবেক পিএস বকুলের গোপন বৈঠক হয়। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হিজড়া নেতাদের সাথে প্রায় এক ঘন্টার বৈঠক করেন তারেক রহমান। এ বৈঠকের পরই সোহেল বিএনপির পক্ষে নেতাকর্মীদের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে হিজড়া করার সম্মতি দেন। এ নিয়ে খালেদাপন্থী মির্জা আব্বাসের আপত্তির কারণে তারেকপন্থী হাবিবুন্নবী সোহেলের বাকবিতণ্ডা হলে সোহেলকে পার্টি অফিস থেকে বের করে দেয়া হয় । কিন্তু অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে হিজড়া তৈরি প্রকল্প অব্যহত থাকে। হিজড়াদের সংঘবদ্ধ একটি চক্র রয়েছে। তারা অনেক পুরুষদের হিজড়া হতে প্রলুব্ধ করেন, উদ্দেশ্য নিজেদের দল সমপ্রসারিত করা।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে মগবাজারের সাবেক এক ছাত্রদল নেতা মনিরের কথা হয়। তিনি জানান, কিশোর বয়স থেকেই রাজনৈতিক কর্মকান্ডের অংশ হিসেবে কমলাপুর রেলস্টেশন, মগবাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাথে থাকতেন তিনি। তার মা-বাবা কে তা জানা নেই। ফুটপাথে থাকতে গিয়েই হিজড়াদের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। হিজড়ারা তাকে তাদের সঙ্গে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। অতপর হিজড়াদের পরামর্শেই রাজধানীর একটি হাসপাতালে সার্জারি করে নিজেও হিজড়ায় পরিণত হয় সে।
রূপান্তরিত হিজড়ারা পুরুষদের মতো দেখতে হলেও সে থ্রি-পিস পরে। লম্বা চুল বেঁধে রাখে। সন্ধ্যার পর সাজগোছ করে শহরের বিভিন্ন এলাকায় বেড়াতে যায়। অনেক সময় ছেলেদের খপ্পরে ফেলে মানিব্যাগ, ঘড়ি ও মোবাইল ফোন লুটে নেয় বলে স্বীকার করে। হিজড়ায় পরিণত হওয়ায় কোন আফসোস নেই তার। তার মতে, হিজড়ারা অনেক সংগঠিত। সমস্যায়-সঙ্কটে তারা একে-অন্যের পাশে থাকে।
বিভিন্ন কারণে সার্জারি করে অনেকে হিজড়ায় পরিণত হচ্ছে। কিন্তু তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয় না। তারা যাতে বিপথগামী না হয় এ জন্য নিয়মিত কাউন্সিলিং করে কয়েকটি এনজিও। বর্তমানে বিএনপির রাজনীতিতে তারা বেশ ভাল ভূমিকা পালন করছে।
রাজধানীর গোলাপবাগের হিজড়া আবুল হোসেন লালন-পালন করেছেন চারটি শিশুকে। এর মধ্যে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। আর পালিত একমাত্র ছেলে সপ্তম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। পঞ্চাশোর্ধ্ব আবুল সব সময় শাড়ি-ব্লাউজ পরে থাকেন। দুই কানে আছে স্বর্ণের দুল, নাকফুল। বাম হাতের আঙুলে দু’টি আংটি। হাতে ব্রেসলেট। চুলের পরিমাণ কম হলেও তা বেঁধে রাখেন। এলাকার সবাই তাকে চেনে আবুল হিজড়া নামে। হিজড়া হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে সাহায্য হিসেবে টাকা আদায় করেন তিনি। তবে অতীতের তুলনায় এখন আদায়কৃত টাকার পরিমাণ কম হওয়ায় বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হন।
আবুল হিজড়ার অতীত সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাবেক ছাত্রদল নেতা আবুল হোসেনের কিশোর বয়স থেকেই নাচ-গান ভাল লাগতো। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তখন থেকেই নাচ-গান করতো হিজড়ারা। হিজড়াদের নাচ-গান দেখতে গিয়েই পরিচয় হয় মনু হিজড়ার সঙ্গে। আর এটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় আবুলের। হিজড়াদের সঙ্গে মেলা-মেশার কারণে তার আচার-আচরণেও কিছুটা পরিবর্তন আসে। আবুলের মা-বাবার নজরে আসে তা। এ নিয়ে তারা অনেকবার মারধর করেন আবুলকে। কিন্তু মা-বাবা ও ভাইদের শাসন তাকে মনু হিজড়ার সঙ্গ ছাড়া করতে পারেনি। একপর্যায়ে মা-বাবাকে না জানিয়ে মনু হিজড়ার সঙ্গী অন্য হিজড়াদের সঙ্গে আবুল চলে যান যশোরে। সেখানে পরিচয় হয় যশোর থেকে আসা অন্য হিজড়াদের সঙ্গে। তাদের একজন রত্না। সেখান থেকে বেনাপোল হয়ে রত্নার সঙ্গে আবুল চলে যান ভারতের বনগাঁও। হিজড়াদের সঙ্গে মিশতে গিয়ে বাধা হয়ে দাঁড়ায় আবুলের লিঙ্গ পরিচয়। এক পর্যায়ে ভারতের হিজড়াদের পরামর্শে গুজরাটের সীমান এলাকার একটি হাসপাতালে অপারেশন করান তিনি। সেই থেকে আবুল হোসেন নাম বদলে যায়। তিনি হয়ে যান আবুল হিজড়া। অপারেশনের সঙ্গে দেয়া হয় নানা ওষুধ। এর মধ্যে হরমোন-সংক্রান্ত ওষুধও ছিল। এসব ওষুধ সেবনের এক পর্যায়ে তার স্তনের আকার বড় হয়।
জানা গেছে, ভারতে যাওয়ার পর দিল্লি, গুজরাট ও কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় অনেক বাংলাদেশি হিজড়া নাচ-গান করেছেন। নাচ-গান করে বড় অংকের টাকা সংগ্রহ করেন। আগে যারা শাড়ি পরে ঘুঙুর পায়ে হিজড়াদের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় নাচ-গান করতেন। তারা লিঙ্গ পরিবর্তনের পর দ্বিগুন আয় করছেন।
যেমন রুপান্তরিত কাজলী হিজড়ার ধলপুরে একটি বাড়ি রয়েছে। রাশেদা হিজড়ার আশুলিয়ায় পাঁচ তলা বাড়ি রয়েছে। মানুষের কাছ থেকে চেয়ে নেয়া টাকা দিয়েই এ বাড়ি তৈরি করেছেন।
জানা গেছে, ২০১১ সালে রাশিদা ও আবুল হিজড়ার নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী হিজড়া দল গঠিত হয়। তবে দলের সকল কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করলেও দল থেকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। হিজড়া নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা যায় তারা দলীয় অনুমোদনের জন্য তারেক রহমানের উপর আস্থাশীল।
মূলত অর্থের লোভেই লিঙ্গ পরিবর্তনে জড়িয়ে পড়ে কিশোর ও তরুনরা। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রণোদনার কারণে এ প্রবণতা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এ নিয়ে আশংকা প্রকাশ করেছেন অনেকে।