১২ এপ্রিল নুরুল হক নুরু কোটা বাতিল করায় প্রধানমন্ত্রীকে মাদার অব এডুকেশন খেতাবে ভূষিত করেছিল। গতকাল শিবিরের অনলাইন একটিভিস্ট নুরুল হক নুরু লাইভ বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকিদাতার মুক্তি চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা লোপাটের জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই যে তদন্ত করেছে সেখানে প্রমাণ হয়েছে বাংলাদেশের কেউ জড়িত ছিলেন না। প্রধানমন্ত্রী কোটা চাইলে আন্দোলন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছিলেন, এর কারণ ছিল জনমতকে গুরুত্ব দেয়া ও সচেতন করা। কিন্তু ইন্ডিপেনডেন্ট টিভিতে নুরু উস্কানি দেয়ার অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেছে। কার্যকর কোনো দাবি না থাকলেও ফেসবুক গ্রুপ ও আইডি থেকে ক্রমাগত মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। এতকিছুর পর শিবিরের গুটিকয়েক কর্মী বিনা বাধায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূচি পালন করছে!
ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ‘কটূক্তি’ ও “হত্যার” অভিযোগে আইসিটি আইনের মামলায় গ্রেপ্তার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাইদুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। পুলিশের রিমান্ড আবেদনের শুনানি করে চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহীদু্ল্লাহ কায়সার সোমবার এ আদেশ দেন।
কোটা ছাড়া কোনো দাবি নেই, ঘরে ফিরে যাবো এ জাতীয় মুখরোচক কথা বলে ইতিমধ্যে শহীদুল আলম ও মাইদুলসহ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কটূক্তকারীদের মুক্তির দাবিতে কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছে নুরুরা।
ইন্ডিপেনডেন্ট টিভিতে প্রধানমন্ত্রীকে উস্কানি দেয়ার জন্য অভিযুক্ত করলেও বিনা বাধায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূচি পালন করেছে। শিবিরের এ হেন অপতৎপরতায় ছাত্রলীগের নিষ্ক্রিয়তায় অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের পরিদর্শক (প্রসিকিউশন) বিজন কুমার বড়ুয়া বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে রিমান্ডের আবেদন করা হলে আদালত মাইদুলের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করল। শুনানিতে আমরা বলেছি, তিনি একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হয়ে ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে ব্যঙ্গ করেছেন। কিভাবে হুমকি দেন? উনার কাছ থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা কী শিখবে?
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ‘কটূক্তি’ করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার কারণেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাইদুল ইসলামেরকে ২৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মাইদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করে। আদালতে বিচার চলমান। এ অবস্থায় যারা তার পক্ষে কর্মসূচি দিচ্ছে তারা আদালত অবমাননা করছে।
মাইদুল ইসলামসহ গ্রেপ্তারকৃত শিবিরপন্থী নেতা ও শিক্ষকদের মুক্তির দাবিতে প্রথম থেকেই সোচ্চার রয়েছে কোটা আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট শিবিরের অনলাইন একটিভিস্টরা। বাক স্বাধীনতার কথা বললেও তাদের তৈরি ফেসবুক গ্রুপে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সকলকে বের করে দেয়া হয়েছে।
বিভিন্ন হুমকি দেয়া ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে পরোক্ষভাবে কটাক্ষ করছে। প্রধানমন্ত্রী উস্কানি দিয়েছেন বলা ছাড়াও তক্রমাগত সরকার বিরোধী প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে শিবিরের অনলাইন একটিভিস্ট নুরু, তারেক রহমান, মশিউর, তারেক রহমান ও সোহরাবসহ অনেকেই। আর এতে নেপথ্যে থেকে সমন্বয় করছে কবীর হোসেন শুভ নামে এক প্রবাসী শ্রমিক। আন্দোলনকারীদের মধ্যে রাশেদ ও মামুন শুধু কোটা আন্দোলনে সীমাবদ্ধ থাকতে চাইলেও নুরু ও মশিউর সরকার বিরোধী আন্দোলন শুরু করে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ঐক্যজোটের অংশীদার হতে চাচ্ছে। নুরু, মশিউর ও তারেকের সঙ্গে কবীর হোসেন শুভ নামে এক প্রবাসী শ্রমিকের মাধ্যমে লিয়াজোঁ রক্ষা করে প্রকৃতপক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছে মতিউর রহমান নিজামীর পুত্র ওয়ামী ও ফ্রিডম পার্টির দেওয়ান ইসমাইল।
নানা বাহানায় ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে প্রতারণা করে টাকা আদায় বিশ্বাসযোগ্যতা হারানোর কারণে প্রবাসীদের প্রতি মনোযোগ দেয়া হয়। বিএনপি জামাতদের প্রবাসী নেতাকর্মীদের কাছ থেকে আন্দোলনের নামে টাকা জোগাড়ে সরাসরি সহায়তা করছে ওয়ামী। দেওয়ান ইসমাইলের নির্দেশে ফ্রিডম পার্টির কর্মিরা কোটা আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে। বিদেশ থেকে আদায় করা টাকা কবীরের পেপালে জমা হয় এবং তা পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে নুরু ও তার পরামর্শে সংশ্লিষ্টদের একাউন্টে।
পটুয়াখালীর কলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস ইউনিয়নের এক হত দরিদ্র পরিবারে নুরুল হক নুরুর জন্ম। তার বাবা ইদ্রিস হাওলাদার ভূমিহীন কৃষক ছিল। ইদ্রিস বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পর কয়েকটি দালালির কাজ করে ইউপি সদস্য হয়েছিল। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দলের লোক সাজায় তাকে স্থানীরা গলাচিপার মওদুদ ডাকে। সরকারী গম ও বন্যার্তদের ত্রাণ কেলেঙ্কারির কারণে ইদ্রিস পরবর্তিতে আর নির্বাচিত হতে পারে নি। বহু বিবাহের কারণে ইদ্রিসকে নিয়ে এলাকায় নানা কথা প্রচলিত আছে। নুরুর মা গলাচিপার সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হকের বাসায় গৃহভৃত্যের কাজ করতো। নুরু মা বেঁচে নেই, এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে ইদ্রিস আরেক বিয়ে করার জন্য তার স্ত্রীকে হত্যা করে। উল্লেখ্য নুরুর নানা ভুয়া মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট গ্রহণের চেষ্টা করে গণধোলাই খেয়েছিল।
গলাচিপার রাজা মিয়া জানান, নুরু ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় সর্বহারা দলের যুক্ত হয়ে বিভিন্ন অপকর্মে যুক্ত হলে তাকে গাজিপুরে বোনের বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। স্কুল জীবনেই গলাচিপার হাতেম মাস্টারের মেয়ের সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন এবং পালিয়ে বিয়ে করেন। সে সময় দুজনের কারোই বিয়ের বয়স হয় নি। ভাবী মিতা আক্তারের সমঝোতায় সকলে মেনে নিলে তারপর থেকে শ্বশুরের অর্থেই চলছে নুরু। গাজীপুরে বিএনপি নেতা হাসান সরকারের একটি মাদক স্পটে নুরু খন্ডকালীন দায়িত্ব পালন করতো নুরু। সে সময় থেকে সে ফেনসিডিলে আসক্ত হয়ে পড়ে।
সর্বশেষ কোটা আন্দোলনে নুরু, মশিউরদের যুক্ত হওয়ার নেপথ্যে ছিল ছাত্রছাত্রীদের টাকা হাতিয়ে নেয়া। পৃথিবীর কোনো আন্দোলন ভিক্ষাবৃত্তির উপর গড়ে ওঠেনি। এ আন্দোলনকারীদের কেউ রিকশাওয়ালার সন্তান, কেউ জেলের সন্তান, কেউ দরিদ্র কৃষক বা গার্মেন্টস কর্মির সন্তান। তাই পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ না থাকায় নিকৃষ্ট পরিবারের এইসব সন্তানদের মানুষের কাছে হাত পাততে মোটেও বিবেকে বাধে না। ভবিষ্যৎ বা ক্যারিয়ার বলে কিছু নেই, পরীক্ষার ফলাফলও সন্তোষজনক নয়। তাই বিএনপি জামাতের অর্থের লোভে আন্দোলন খেলায় মেতেছে তারা।
কোটা আন্দোলনের নেতৃত্বের কথার কোনো মূল্য নেই তা প্রমাণিত। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বাহানা দিয়ে এখন তারা শহীদুল আলম, মাইদুলের মুক্তি, এমনকি সিনহা ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতেও কথা বলা শুরু করেছে। অতএব বলার অপেক্ষা রাখে না তারা বাংলাদেশ বিরোধী শক্তির ইন্ধনে পরিচালিত হচ্ছে। এ অবস্থায় কোটা নিয়ে আন্দোলন করতে হলে অবশ্যই এই চিহ্নিত দালালদের উৎখাত করে নতুন নেতৃত্ব মনোনীত করতে হবে।
কার্যত কিছু করতে না পারলেও সাধারণ জনগণের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ও জামাত শিবিরের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এই প্রতারকচক্র নানা বাহানায় আন্দোলনের নামে উস্কানি অব্যহত রাখছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জামাত শিবির যে ভয়াবহ নাশকতার পরিকল্পনা নিয়েছে তাতে সহযোগিতা করতে ও শিবিরের ক্যাডারদের নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করতে ষড়যন্ত্র করছে কোটার নামে আন্দোলনকারী গুটিকয়েক ব্যক্তি। নুরুকে অবিলম্বে গ্রেফতার করা উচিত বলে দাবি উঠেছে অনেক আগেই। তাকে রিমান্ডে নেয়া হলে নেপথ্যের সকল ষড়যন্ত্র উন্মচিত হবে।