রাজশাহী নগরীর নতুন ভূতপাড়া এলাকায় কুড়িয়ে পাওয়া বোমার বিস্ফোরণে গতকাল মুসান্না ও আহসান বান্না নামের দুই শিশু মারাত্মকভাবে আহত হয়। তাদের রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রক্তাক্ত দুই শিশুর একটিকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
রাজশাহী নগরীর নতুন বুধপাড়া এলাকায় জামায়াত নেতা দুই ভাইয়ের বাড়ির পাশের বাগানে লুকিয়ে রাখা বোমা বিস্ফোরণে তাঁদের দুই শিশুপুত্র আহত হয়। তাদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও একজনকে গোপনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
গতকাল রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জামায়াত নেতা আবদুস সামাদের বাড়ির পাশে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানিয়েছে। আহত দুই শিশু হলো- মতিহার থানার জামায়াতের আমির সামাদের ছেলে হাসানুল হক বান্না (১০) ও তাঁর ছোট ভাই জামায়াত নেতা আবদুস সবুরের ছেলে আবু মোসান্না (৫)।
বান্নাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৮ নম্বর নিউরো সার্জারি ওয়ার্ডে এবং মোসান্নাকে ভর্তি করা হয়েছে ১ নম্বর অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে।
হাসপাতালের শিক্ষানবিশ কয়েকজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, বান্নার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার মাথার পেছনে বোমার স্পিন্টারের আঘাতে মারাত্মক ক্ষত হয়েছে। সেখানে ১০-১২টি সেলাই পড়েছে। মোসান্নার বাম পায়ের কয়েক স্থানে জখম হয়েছে। সেই সঙ্গে একটি হাতের কবজির ওপর চিড় ধরেছে।
এর মধ্যে সন্ধ্যার দিকে সিটি স্ক্যান করানোর নাম করে বান্নাকে তার স্বজনরা হাসপাতাল থেকে নিয়ে গেছে বলে হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক উত্তম কুমার জানান।
৮ নম্বর ওয়ার্ডে কর্তব্যরত শিক্ষানবিশ চিকিৎসক ডা. এম এইচ সবুজ হায়াত বিষয়টি নিশ্চিত করে কালের কণ্ঠকে বলেন, তিনি আবার দেখতে গিয়ে বান্নাকে শয্যায় পাননি। এর আগে বোমা বিস্ফোরণের বিষয়ে বান্নাকে কথা বলতে বাধা দেয় পরিবারের সদস্যরা।
নগরীর মতিহার থানার ওসির দায়িত্বে থাকা উপপরিদর্শক মনিরুল ইসলাম জানান, হাসানুল হক বান্না ও মোসান্না বাড়ির পাশের আমবাগানে খড়-কুটোতে আগুন ধরিয়ে পোহাচ্ছিল। এ সময় পাশে পড়ে থাকা দুটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে বলে তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। তবে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
ওসি বলেন, জামায়াত নেতার বাড়ির পাশে বোমা লুকিয়ে রাখার বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। নাশকতার জন্য তাঁরাই সেখানে বোমা দুটি রাখতে পারেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
মোসান্নার মা তামান্না বেগম কালের কণ্ঠকে জানান, গতকাল দুপুর ১২টার দিকে তাঁর ছেলে মোসান্না ও ভাসুর আব্দুস সামাদের ছেলে বান্না বাড়ির পাশে আমবাগানে খেলতে যায়। প্রায় আধাঘণ্টা পর হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দ শুনে সেখানে গিয়ে দেখেন দুটি শিশুই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। পরে তাদের হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালে তামান্নাসহ পরিবারের লোকজনকে গোপনে একাধিকবার কথা বলতে দেখা গেছে। এর মধ্যে একবার তাদের বলতে শোনা গেছে, ‘হাসপাতালে না এনে ক্লিনিকে নিলে হতো। তা হলে কোনো ঝামেলা হতো না।’
স্থানীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, জামায়াত নেতা আব্দুস সামাদ আত্মগোপনে আছেন। এ অবস্থায় তিনি গত ১৫ জুন অনুষ্ঠিত রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হন।
মন্তব্য করুন