পাটকেলঘাটার ছোটকাশীপুরে সমিতির নামে জমজমাট সুদের ব্যবসায় সর্বস্ব হারিয়ে এলাকাছাড়া প্রায় ১০টি পরিবার। অবৈধ সমিতির সুদের জালে প্রায় ৯৫ ভাগ পরিবার। সুদের টাকা না দিতে পারায় হুমকির মুখে আছে ২শ পরিবার। সরকারী অনুমোতি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে চলছে সুদের ব্যবসা। সমিতির নামে অবৈধ সুদের ব্যবসা বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করছেন এলাকাবাসী।
সূত্রে জানা যায়, পাটকেলঘাটা থানার ছোটকাশীপুর গ্রামে ২বছর আগে ছোটকাশীপুর সততা সঞ্চয় ক্ষুদ্র ঋণদান সমবায় সমিতি (রেজিঃ ৫৮/৭) নামে একটি সমিতির রেজিষ্টেশন হয়। ২১ সদস্য বিশিষ্ট একটি সদস্য কমিটিও করা হয়। যার সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় দাস ও সাধারন সম্পাদক শুকচাঁদ দাস কে মনোনীত করেন। তবে এই সমিতি থেকে কোন সময় ঋণ দেওয়া হয়নি। ২১ জন সদস্য ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা অবৈধ ভাবে এলাকার অসহায় গরীব মানুষের মধ্যে চড়া সুদে মহাজনি কায়দায় বিতারন করেন। বর্তমানে একটি সমিতির রেজিঃ ব্যবহার করে এখানে গড়ে উঠেছে আরো ছোট বড় ১৮টি সমিতি। সে সমিতি গুলোর সভাপতি ও সম্পাদকরা এলাকার নিন্মবৃত্ত শ্রেণীকে চড়া সূদে ঋণ দিতে শুরু করে। পরে চক্রবৃদ্ধি হারে মুল টাকা সহ সুদের টাকাও সুদ বাড়তে থাকে। টাকা পরিশোধ করতে না পারায় বসত ভিটা বিক্রি করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে প্রায় ১০টি পরিবার। এছাড়া আরো ২৫টি পরিবার গ্রাম ছাড়ার অপেক্ষায় আছে। এসব সমিতির আর্থিক লেনদেন হয় গভীর রাতে। অধিকাংশ সমিতির নেই কোন রেজুলেশন খাতা। শুধু মুল ও সুদের টাকার হিসেবে হয়।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, এই অবৈধ সমিতির ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে গ্রাম ছাড়া হতে হয়েছে, দক্ষিন পাড়ার আনন্দ দাসকে সে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন এমন একটি সমিতি থেকে। সপ্তাহে ২৫শ টাকা সুদ দিতে না পারায় দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। এছাড়া মধ্যপাড়ার বিষ্টুপদ দাস, ফটিক দাস, সঞ্জয় দাস, বেড়ী দাস, সুজিত দাস, বরশা দাস সহ আরো অনেকের এমন করুন পরিনতি হয়েছে। ভিটেবাড়ী বিক্রি করে পরিবার নিয়ে ভারত, ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে গেছে। সমিতির সুদের লেনদেন চলাকালে পূর্বপাড়ার ভোলার বাড়ীতে যেয়ে দেখা যায়, সেখানে একটি খাতা নিয়ে বসে সুদ ও কিস্তির টাকা আদায় করছেন সমিতির সভাপতি ভোলাদাস। সমিতির রেজিঃ দেখতে চাইলে মন্দির কমিটির একটি অনুমোদন পত্র দেখিয়ে বলেন, এটা মন্দির কমিটির টাকা। মন্দিরের উন্নয়নের জন্য সমিতি এলাকার মানুষের মধ্যে সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে সে টাকা আদায় করার জন্য আমাদের বলেছে। এছাড়াও এমন আরো ১৭টি সমিতির আছে যেখান থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়া হয়। সমিতি গুলোর মধ্যে পূর্ব পাড়ার বাবুল দাসের দোকানে, মানিকতলায় বিষ্টুর বাড়ীতে, পূর্ব পাড়ার দীলিপের বাড়ীতে, পূর্ব পাড়ার নয়ন দাসের বাড়ীতে, পূর্ব পাড়ার বাবলু দোকানে, কাঁঠালতলার রাম দাসের বাড়ীতে, রবিন দাসের ভাড়া দোকানে, মধ্যপাড়ার কানাই দাসের বাড়ীতে, আত্নরাম দাসের বাড়ীতে, এছাড়া পশু চিকিৎসক ডাঃ সুভাষ দাসের বাড়ীতে গভীর রাতে বসে এই সুদের ব্যবসার কারবার। লেনদেন হয় গরীব মানুষগুলোর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কষ্টাজিত টাকার হিসাব নেওয়ার পালা। এই দাস পাড়ার বেশীর ভাগ লোক অশিক্ষিত। এদের কে সহজ শর্তে ঋণের কথা বলে বেকায়দায় ফেলে ভিটেবাড়ী ছাড়া করা সহ অবৈধ অনেক কর্মকান্ড করে চলেছে।
এ ব্যাপারে তালা উপজেলা সমবায় অফিসার অজয় কুমার ঘোষ জানান, এ ধরনের কাজ দন্ডনীয় অপরাধ। এই কর্মকান্ডের জন্য সর্বচ্চো শাস্তি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও ১বছরের জেল। দ্রুত এঘটনাটি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিষয়টি সমিতির সভাপতির ও সাধারন সম্পাদকের কাছে জানাতে চাওয়ার চেষ্টা করা হলে তাদেও মুঠো ফোনে সংযোগ পাওয়া সম্ভব হয়নি।
এলাকার ভূক্তভোগী মহলের দাবী যাতে এই অবৈধ সূদের ব্যবসা বন্ধ হয় তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছে সচেতন মহল।
মন্তব্য করুন