কুষ্টিয়ায় হেফাজত-নিয়ন্ত্রিত একটি কওমি মাদ্রাসায় সম্প্রতি ৯ বছর বয়সী এক শিশুছাত্রকে বলাত্কারের চেষ্টা ও তাতে ব্যর্থ হয়ে তাকে নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক হাফেজ মো. তানভীরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত রোববার রাতে নির্যাতিত শিশু আবদুল্লাহ বিন আক্তারের মামাতো ভাই আব্দুল লতিফ তানভীরকে আসামি করে মামলা করেন। পরে একই দিন গভীর রাতে অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, রমজানের প্রথম রাতে শিক্ষক তানভীর নির্যাতিত শিশু আবদুল্লাহকে তার শয়ন কক্ষে ডাকেন। সেখানে গেলে তানভীর তাকে কু-প্রস্তাব দেয়। আবদুল্লাহ তাতে রাজি না হলে পরদিন সকালে মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে পিলারের সঙ্গে বেঁধে তাকে বেদম মারধর করা হয়। এতে আবদুল্লাহ চরম অসুস্থ হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে তার মামাতো ভাই আব্দুল লতিফ তাকে বাড়ি নিয়ে যান। এরপর আবদুল্লাহর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটলে তাকে কুষ্টিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
উল্লেখ্য, এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর শিক্ষক তানভীরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ফুঁসে উঠে এলাকাবাসী। এ ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে তানভীরের লেলিয়ে দেওয়া সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হন ৬ সংবাদকর্মী। জানা গেছে, গতকাল সোমবার সকালে কুষ্টিয়া মডেল থানায় এ হামলার ঘটনায় মামলা করেছেন হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি মিলন উল্যাহ।
মামলায় সমকামী কওমি-শিক্ষক মোহাম্মদ তানভীরসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি মশিউর রহমান জানান, সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
কওমি মাদ্রাসায় সমকামের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে
দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোয় ক্রমেই বাড়ছে সমকামের ঘটনা। এ নিয়ে যারপরনাই উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। যারা এমন পৈশাচিকতার স্বীকার, তারা অনেকেই লোকলজ্জায় কিংবা ভয়ে ঘটনা প্রকাশ করতে চায় না। ফলে অল্প কিছু ঘটনা জানা গেলেও আড়ালে থেকে যাচ্ছে অধিকাংশগুলোই।
পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার গোয়ালদিঘী নেছারিয়া ছালেহিয়া দাখিল মাদ্রাসার ২য় শ্রেণীর ছাত্র সেলিমকে মাদ্রাসার কৃষি বিভাগের শিক্ষক ও বোর্ডিং সুপার মো. মুক্তারুল আলম বলাত্কার করেন চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি। উপজেলার কিসমত গ্রামের মৃত সোহেল ওরফে ঝাপরুর পুত্র সেলিম (৮) দীর্ঘদিন থেকে ওই মাদ্রাসায় থেকে লেখাপড়া করে। অভাবের তাড়নায় তার মা অন্যের বাসা-বাড়িতে কাজ করেন। শিক্ষক মুক্তারুল আলম সেলিমকে একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে নিয়ে জোর করে বলাত্কার করে। পড়ে শিশুটির পরিবারকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে ওই শিক্ষক পার পেয়ে যান।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার নুরুল উলুম কওমি হাফিজিয়া মাদ্রাসার সুপার আবুল হাসেম চলতি বছর জুনে ছাত্র ওমর ফারুককে বলাত্কার করে। ঘটনার পর ১৪ জুন ছাত্রের বাবা মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির কাছে সুপারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, দ্বীনি শিক্ষার জন্য তার পুত্রকে মাদ্রাসায় ভর্তি করানো হয়েছিল। কিন্তু ছেলে বাড়িতে এসে জানায়, সে আর মাদ্রাসায় যাবে না। কারণ জানতে চাইলে সে লজ্জায় কিছু বলে না। অবশেষে ছাত্র ওমর ফারুক তার ভাবিকে জানায়, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবুল হাসেমকে হাত-পা, শরীর মালিশ করে দেওয়ার সময় তিনি তাকে বলাত্কার করেন। এ কারণে সে আর মাদ্রাসায় পড়তে চাইছে না।
ঝিনাইদহের আল ফারুক একাডেমি মাদ্রাসার এক ছাত্রকে বলাত্কারের ঘটনায় গত বছরের জুন মাসে মাদ্রাসাটির শিক্ষক হাফেজ মো. হাসানুজ্জামানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। হাসানুজ্জামান যশোরের চৌগাছা পৌর এলাকার জহর আলীর ছেলে। গভীর রাতে হাফেজ মো. হাসানুজ্জামান হাফেজি শাখার একশিশুকে জোর করে বলাত্কার করে। এ ঘটনায় ঝিনাইদহ থানায় একটি মামলাও হয়।
মন্তব্য করুন